রাবিতে এবার শিবির নেতার পা কর্তন

ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ রানার পা কাটার দেড়মাস পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্র শিবিরের এক নেতার পা বিচ্ছিন্ন করেছে দুর্বৃত্তরা।

RU

সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলা ভবনে এ হামলায় আহত রাসেল আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স আন্ড ব্যাংকিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখার সাধারণ সম্পাদক।

তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ হামলার জন্য শিবির ছাত্রলীগকে দায়ী করলেও ছাত্রলীগ তা অস্বীকার করেছে।

মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন  বলেন, কতিপয় ‘দুষ্কৃতিকারীরা’ রাসেলের ডান পা গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন করে বাম হাতের রগ কেটে দিয়েছে। পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ রাসেলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

ঘটনাস্থল থেকে ইসলামী ছাত্র শিবির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক জিয়াউদ্দিন বাবলু ওরফে হাসিবুর রহমান হাসিবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১টা থেকে আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ৪০৭ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষায় শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক জিয়াউদ্দিন বাবলু অংশগ্রহণ করছেন- এমন তথ্যের ভিত্তিতে দুপুর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

এদিকে শিবির নেতা রাসেল আলমকে আটক করে শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিন, সহ-সভাপতি তন্ময় আনন্দ অভি, সহ-সম্পাদক ফারুক হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ রুনু, কাওয়ার আহম্মেদ কৌশিক, যুগ্ম সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, রিনেটসহ ৮/১০ নেতাকর্মী।

পরে ছাত্রলীগ নেতারা রাসেল আলমকে শহীদুল্লাহ কলা ভবনের ভিতরে নিয়ে যান এবং কিছুক্ষণ পর বিকাল সোয়া ৪টার দিকে শহীদুল্লাহ কলা ভবনের ভিতর থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। পরে পুলিশ ভিতরে গিয়ে রাসেল আলমের ডান পা বিচ্ছিন্ন ও বুকে কয়েকটি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পায় এবং তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

এর আগে বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ পরীক্ষার হলে গিয়ে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে আটক করে নিয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানান, রাসেলকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং হলের ভেতর নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেনসহ একদল পুলিশ ছিল।

মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে কখনো এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তবে পুলিশ আগে জানলে রাসেলকে গ্রেপ্তার করত।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক তোফাজ্জেল হোসেন জানান, এই ছাত্রের ডান পা গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

তার ডান হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে, যেখানে রগ কেটে গেছে। এছাড়া দুই পায়ের হাঁটুর উপরে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে তিনি জানান।

শিবিরের প্রচার সম্পাদক লাবিব আব্দুল্লাহ  বলেন, রাসেল আলমকে পুলিশের পাহারায় ছাত্রলীগ নেতারা বুকে গুলি করে ডান পা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

অথচ আমাদের এক নেতা পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল, পুলিশ সেখানে তাকে আটক করে নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা  বলেন, এই ঘটনায় ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত থাকতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। এটি শিবিরের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফল।

গত ২৯ এপ্রিল ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ রানার পায়ের পাতা বিচ্ছন্ন করেছিল দুর্বৃত্তরা, যার জন্য শিবিরকে দায়ী করেছিল ছাত্রলীগ।

রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মঙ্গলবার হরতাল

এদিকে শিবির নেতার উপর হামলার প্রতিবাদে রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে মঙ্গলবার আট ঘণ্টা হরতাল ডেকেছে সংগঠনটি।

সোমবার সন্ধ্যায় শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক ফরহাদ রেজার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এ তিন জেলায় হরতাল ডাকা হয়েছে।

সংগঠনের নেতাদের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

Pin It