নতুন শনাক্ত ৪১৮, মৃত্যু ৫ । ৫০ দিনে আক্রান্ত ৫৪১৬, মৃত্যু ১৪৫

Untitled-67-samakal-5ea5e794b61ab

আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১৮ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হলো পাঁচ হাজার ৪১৬। একই সঙ্গে গত চব্বিশ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৫ জনে।

দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। ২৪ দিনের মাথায় গত ১ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধশত পার করে ৫৪ জনে পৌঁছায়। এরপর জ্যামিতিক হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৮ এপ্রিল এক দিনে আক্রান্ত হয় ৫৪ জন। ওইদিন আক্রান্তের সংখ্যা ২১৮ জনে পৌঁছায়। এক দিনে প্রথম একশ’র বেশি আক্রান্ত হয় ৯ এপ্রিল। ওইদিন ১১২ জন আক্রান্ত হয়। এরপর আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড গড়েছে। আক্রান্তের সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। শনাক্তের ৫০তম দিনে এসে রোববার আক্রান্তের হার ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের করোনা সংক্রমিত দেশগুলোর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়; প্রথমে দুই-একজনের মাধ্যমে সংক্রমণের সূত্রপাত ঘটেছিল। এরপর ধাপে ধাপে তা বেড়েছে। প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার এক মাস পর ১০০ থেকে ১৫০ জনের মতো আক্রান্ত হয়েছেন। পরের দিকে প্রতিদিন হাজার হাজার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমাদের দেশের পরিস্থিতিও সেদিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু হাজার হাজার সংক্রমিত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে হলে তো এক লাখ মানুষের নমুনা প্রতিদিন পরীক্ষা করতে হবে। কিন্তু আমাদের সেই ব্যবস্থা নেই। সামর্থ্য নেই, সেটি বলব না। কিন্তু এই ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে।

বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে আইইডিসিআরের এক কর্মকর্তার বক্তব্যের সমালোচনা করে ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে পরীক্ষা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করছে, সেখানে ওই কর্মকর্তা বলছেন, সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে। সুতরাং এখন পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। আশ্চর্য লাগে, এ ধরনের ব্যক্তিরা আইইডিসিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে আছেন। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আইইডিসিআরই দায়ী। কারণ শুরুতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়টি তারা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। সংক্রমিত অনেক ব্যক্তিকে তারা পরীক্ষার আওতায় আনতে পারেনি। ওই ব্যক্তিরা বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে ভাইরাসটির বিস্তার ঘটিয়েছে। আইইডিসিআরের পরিচালকের কাজ তো সংবাদ সম্মেলন আর নমুনা পরীক্ষা করা নয়, তার প্রধান কাজ রোগতাত্ত্বিক গবেষণা ও পর্যালোচনা করা। এর মাধ্যমে সরকারকে রোগটির বিস্তার ও গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। কিন্তু তারা সেটি না করে নমুনা পরীক্ষা আর সংবাদ সম্মেলন করলেন। এগুলো অত্যন্ত দুঃখজনক।

প্রথম করোনার সংক্রমণ  : দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনার সংক্রমণ শুরু হয়।

ওইদিন তিনজনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

প্রথম মৃত্যু :  প্রথম সংক্রমণের ১০ দিনের মাথায় দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত ১৮ মার্চ সংক্রমিত প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ৭০ বছরের বেশি বয়সী ওই ব্যক্তি বিদেশ ফেরত একজনের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছিলেন। একই দিন নতুন করে আরও চারজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

অর্ধশত ছাড়ায় :  ১ এপ্রিল আরও একজনের মৃত্যু হয়। মৃতের সংখ্যা ছয়জনে পৌঁছায়। ওই দিন নতুন করে আরও তিনজনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ জনে পৌঁছায়।

১০০ ছাড়ায় : গত ৬ এপ্রিল আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। মৃতের সংখ্যা ১৪ জনে পৌঁছায়। একইসঙ্গে ৩৫ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া যায়। আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছায় ১২৩ জনে।

আক্রান্ত ২০০ ছাড়ায় :  ৮ এপ্রিল ৩ জনের মৃত্যু হয়। মৃতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছায়। আক্রান্ত হয় ৫৪ জন। মোট আক্রান্ত ২১৮ জন।

আক্রান্ত ৩০০ ছাড়ায় :  ৯ এপ্রিল একজনের মৃত্যু হয়। মোট মৃত্যু ২১। ওইদিন আরও ১১২ জন আক্রান্ত হয়। মোট আক্রান্ত ৩৩০।

আক্রান্ত ৪০০ ছাড়ায় : ১০ এপ্রিল ছয়জনের মৃত্যু হয়। মোট মৃত্যু ২৭ জনে পৌঁছায়। আক্রান্ত হয় ৯৪ জন। মোট আক্রান্ত ৪২৪ জনে পৌঁছায়।

আক্রান্ত ৬০০ ছাড়ায় : ১২ এপ্রিল চারজনের মৃত্যু হয়। মোট মৃত্যু ৩৪ জনে পৌঁছায়। ওইদিন নতুন করে ১৩৯ আক্রান্ত হয়। মোট আক্রান্ত ৬২১ জনে পৌঁছায়।

আক্রান্ত হাজার ছাড়ায়, মৃত্যু ৫০ : ১৫ এপ্রিল আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়। ৫০ জনে পৌঁছায় মৃত্যুর সংখ্যা। আক্রান্ত হয় আরও ২১৯ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ২৩১ জনে পৌঁছায়।

আক্রান্ত ২ হাজার ছাড়ায় : ১৮ এপ্রিল আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়। মোট মৃত্যু ৮৪ জন। ওইদিন আক্রান্ত হয় ৩০৬ জন। মোট আক্রান্ত ২ হাজার ১৪৪ জন।

আক্রান্ত ৩ হাজার ও মৃত্যু ১০০ ছাড়ায় : ২১ এপ্রিল মৃত্যু হয় ৯ জনের। নতুন করে আক্রান্ত ৪৩৪ জন। মোট আক্রান্ত ৩ হাজার ৩৮২ এবং মৃত্যু ১১০ জন।

আক্রান্ত ৪ হাজার ছাড়ায় : ২৩ এপ্রিল নতুন করে আক্রান্ত হয় ৪১৪ হয়। মৃত্যু হয় সাতজনের। মোট আক্রান্ত ৪১৮৬ জনে পৌঁছায়, মৃত্যু ১২৭ জনের।

আক্রান্ত ৫ হাজার ছাড়াল : গতকাল রোববার নতুন করে আরও ৪১৮ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ৪১৬ জনে পৌঁছাল। একইসঙ্গে ৫ জনের মৃত্যু হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৫ জনে পৌঁছেছে।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত বুলেটিনে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানান। তিনি জানান, গত চব্বিশ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও ৯ জন। এ পর্যন্ত মোট ১২২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সুস্থ হওয়া ব্যক্তি সবাই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। দেশে বেশিরভাগ আক্রান্ত্ম ব্যক্তি বাড়িতে অবস্থান করে সুস্থ হয়ে যান, সেই তথ্য এখানে দেওয়া হয়নি।

ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গত চব্বিশ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন পুরুষ এবং দু’জন নারী। তাদের মধ্যে চার জন ঢাকার এবং একজন দোহারের বাসিন্দা। মৃতদের মধ্যে একজনের বয়স ১০ বছরের নিচে। শিশুটির কিডনির সমস্যা ছিল। অন্যদের মধ্যে একজনের বয়স ৬০ বছরের ওপরে এবং তিনজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে।

নমুনা পরীক্ষার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, গত চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয় তিন হাজার ৬৮০টি এবং পরীক্ষা করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৭৬টি। এ পর্যন্ত মোট ৪৬ হাজার ৫৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনের তথ্য তুলে ধরে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গত চব্বিশ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৭৫ জনকে। এ পর্যন্ত মোট আইসোলেশনের সংখ্যা ১ হাজার ১৬৪ জন। চব্বিশ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছে ৪৪ জন। এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছে ৭০৯ জন। চব্বিশ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৮৯১ জনকে। সারাদেশে এখন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ৭৯ হাজার ৮৯৯ জন। বর্তমানে ৬৪ জেলায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত আছে ৬০১টি প্রতিষ্ঠান, যেখানে তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ হাজার ৬৩৫ জনকে কোয়ারেন্টাইন সেবা দেওয়া যাবে।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর হিসাব তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগৃহীত হয়েছে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩২১টি। বিতরণ করা হয়েছে ১২ লাখ ৮০ হাজার ৩৮টি। মজুদ আছে দুই লাখ ৫৪ হাজার ২৭৪টি।

বুলেটিনে জানানো হয়, চব্বিশ ঘণ্টায় হটলাইনে ৭৭ হাজার ৯০১ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৩ লাখ ৯১ হাজার ২১১ জনকে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে চার হাজার ২০২ জন চিকিৎসক স্বেচ্ছাভিত্তিতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা হটলাইনে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এই সেবা দেওয়ার জন্য আরও ২৫ জনসহ এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৪৪০ চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ওয়েবসাইট ও মোবাইল ফোনে গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৩১ হাজার ৮৫৮ জনসহ মোট ২৪ লাখ ৭৫ ৫২৮ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে।

নমুনা শনাক্তে আরও দুই প্রতিষ্ঠান : করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষায় আরও দুটি প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। এ নিয়ে ২৫ প্রতিষ্ঠান এ কাজে যুক্ত হলো। বুলেটিনে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, এখন ২৫টি প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। নতুন প্রতিষ্ঠান দুটি হলো, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স ইউনিভার্সিটি এবং দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ। ঢাকার বাইরে জেলাগুলোর মেডিকেল কলেজে ৮টি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।

কিটের সংকট নেই : বুলেটিনে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, করোনা সংক্রমণ পরীক্ষার কিট নিয়ে সমস্যা নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে পিসিআরে পরীক্ষার কিট সংরক্ষিত আছে। ধারাবাহিকভাবে আমরা এটা আমদানি করে যাচ্ছি। নমুনা সংগ্রহে যে কিট লাগে সেটিকে আমরা সোয়াপ স্টিক বলি। যে দেশীয় কোম্পানি এটি উৎপাদন করে, তারা নিয়মিতভাবেই এটি সরবরাহ করে যাচ্ছে।

Pin It