তেলের দাম গরম করছে চালের বাজার

23_Rice+Market_170317_0007

মহামারীর মধ্যে সরকারের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।

ধর্মঘটের কারণে পরিবহন সঙ্কটে সরবরাহ কমায় এবং ট্রাকের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় দুয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম ভোক্তা পর্যায়ে বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

দেশের চালের অন্যতম বড় মোকাম কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় ট্রাকের ভাড়া এর মধ্যেই অন্তত ৩ হাজার টাকা বা বস্তাপ্রতি ১২ টাকা বেড়ে গেছে বলে ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকরা জানিয়েছেন।

ঢাকার কারওয়ান বাজারে জনতা রাইস এজেন্সির মোহাম্মদ রাসেল রোববার বলেন, ধর্মঘটের মধ্যে শুধু কুষ্টিয়ার রশিদ রাইস মিল নিজস্ব পরিবহনে করে ঢাকায় চাল পাঠাত। কিন্তু তারা ভাড়া বাড়িয়েছে।

“প্রতি ট্রাকের ভাড়া ৩ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১৭ হাজার টাকা করা হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এতে প্রতি বস্তায় ১২ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।”

আমন মওসুমের কারণে এখন চালের বাজার স্থিতিশীল হলেও তেলের দাম বাড়ানোর প্রভাবে ‘দুয়েক দিনের মধ্যে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিতে পারে’ বলে এই পাইকারের আশঙ্কা।

বাজারে দাম বেশি বলে টিসিবির ট্রাক থেকে কম দামে চাল-ডাল কিনতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিবাজারে দাম বেশি বলে টিসিবির ট্রাক থেকে কম দামে চাল-ডাল কিনতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
রোববার ঢাকার মিরপুরে কয়েকটি মুদি দোকান ও চালের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরু চাল প্রতি কেজি ৫৭ টাকা থেকে ৬৪ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৮ টাকা থেকে ৫৪ টাকায়। স্বর্ণা, গুটি ও হাইব্রিড ইরি জাতীয় মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।

পীরেরবাগে মায়ের দোয়া বাণিজ্যালয়ের এক কর্মী বলেন, “ধর্মঘটের কারণে গত দুই দিনে নতুন করে চালের দাম বাড়েনি। তবে মিরপুর ও মোহাম্মদপুরের মোকামগুলোতে খবর নিয়ে দেখেছি, তিন দিন ধরে চালের সরবরাহ কমে গেছে। সরবরাহ ঘাটতির কারণে দাম কিছুটা হলেও বাড়বে।”

সরকারের বিশেষ অনুমতি নিয়ে ভারত থেকে যে চাল আসছিল, এক সপ্তাহ ধরে তাও বন্ধ রয়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। তবে ভোক্তাদের জন্য সুখবর হলো গ্রামের হাট-বাজার আমন মওসুমের নতুন ধান উঠার অপেক্ষায় রয়েছে।

সরকার ডিজেলের দাম এক বারে ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর শুক্রবার সকাল থেকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হয়। নগর পরিবহন ও দূরপাল্লার বাসের পাশাপাশি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়।

বাস ও মিনিবাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পর যাত্রীবাহী পরিবহনের ধর্মঘট রোববার সন্ধ্যায় তুলে নেওয়া হলে পণ্য পরিবহনের ধর্মঘটে অনড় মালিক-শ্রমিকরা।

পরিবহন ধর্মঘটে গত তিন দিনে চালের সরবরাহ তলানিতে নেমেছে জানিয়ে কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ভারতীয় চাল আমদানি বন্ধ হওয়ার পর সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা বেড়েছে। এখন পরিবহন ব্যয় বাড়ায় এর সঙ্গে ১২ থেকে ১৫ টাকা যোগ হবে।

মিরপুর শাহ আলী মোকামের পাইকারি বিক্রেতা মহিউদ্দিন হারুন বলেন, বিভিন্ন মোকাম থেকে তার দোকানে সপ্তাহে দুই/তিনটা চালান আসে। গত তিন দিন ধরে চাল আসেনি।

“আজকে এক ট্রাক চালের অর্ডার দিয়েছি রশিদ মিনিকেটের কাছে। তারা ভাড়া বাবদ ট্রাক প্রতি ৩ হাজার টাকা বেশি নির্ধারণ করেছে। এই টাকাটা তো চালের খুচরা বিক্রির ওপর প্রভাব ফেলবে।”

তার দোকানে ৫০ কেজির মিনিকেট চালের বস্তা ২৭৫০ টাকা থেকে ২৮৫০ টাকা, বিআর আটাশ ২১২০ থেকে ২২৫০ টাকা, পাইজাম ২২৫০ থেকে ২৩০০ টাকা। ভারতীয় পাইজাম ২১০০ টাকা, হাইব্রিড ইরি (মোটা) ১৯০০ টাকা থেকে ১৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কুষ্টিয়ার খাজানগরের কাবিল এগ্রো মিলে ঝোলানো চালের মূল্য তালিকা।কুষ্টিয়ার খাজানগরের কাবিল এগ্রো মিলে ঝোলানো চালের মূল্য তালিকা।
পরিবহন ধর্মঘটে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাউলের আড়ত কুষ্টিয়ার খাজানগরে আটকে পড়েছিল শত শত ট্রাক। তবে শনিবার সকালের মধ্যে সেগুলো ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সামাদ।

খাজানগর থেকে ভোরে ও রাতে বেশিরভাগ ট্রাক ছেড়ে যায়। রোববার দুপুরে খাজানগর ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন মিলে ট্রাকে চাল বোঝাই করা হচ্ছে। এসব ট্রাক রাতে ছেড়ে যাবে।

চালবোঝাই করা হচ্ছে এমন এক ট্রাকের চালক সুমন মিয়া বলেন, রাতে মাদারীপুরে রওনা হবেন তিনি।

পরিবহন সঙ্কটের কারণে তার কল থেকে চাল সরবরাহ কমেছে বলে জানান খাজানগরের দাদা অটো রাইস মিলের মালিক আরশাদ আলী প্রধান।

তিনি বলেন, “আমার মিল থেকে প্রতিদিন ১০০ টনের মতো চাল সরবরাহ করা হত। ধর্মঘটের পর তা ২০ টনে নেমে এসছে।”

একই কারণে ধান কিনে চালকলে আনার পরিবহন খরচ বাড়ায় গত দুদিনে চালের দামও বেড়েছে বলে জানান আরশাদ।

তিনি  বলেন, “পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির কারণে ধানের দাম প্রতি টনে এক হাজার টাকা বেড়েছে।”

চালকল মালিক সমিতির নেতা ও স্বর্ণা অটো রাইস মিলের মালিক সামাদ বলেন, ইতোমধ্যেই ১৪ টন চাউল পরিবহনে ট্রাকের ভাড়া সাড়ে ১২ হাজার থেকে বেড়ে ১৫ হাজার টাকা হয়েছে।

“আমি গত দুই দিন সরবরাহ করেছি আগের অর্ডার দেওয়া চাল। তবে নতুন অর্ডারের সময় দুই প্রান্তের ভাড়ার বিষয়টি চাউলের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।”

আবদুস সামাদের কথাতে মিল গেইট পর্যায়ে চালের দাম বাড়ানোর বিষয়টি স্পষ্ট।

খাজানগরের কাবিল এগ্রো মিলে রোববার মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছিল ২৮০০ টাকা এবং ২৫ কেজির বস্তা ১৪১০ টাকা। বাসমতি ২৫ কেজির বস্তা ১৬৩০ টাকা, কাটারি ২৫ কেজির বস্তা ১৪২৫ টাকা এবং কাজললতা ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১২৭০ টাকায়।

Pin It